প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: 'পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশুর হাট, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য, জালনোটের কারবারি ও নগরবাসীর নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে ৩৩টি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পশুর হাটের ইজারাদারদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক শেষে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনায় যেকোনও মূল্যে নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ডিএমপি সদর দফতরকে অবহিত করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।'
-ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাটসহ অজ্ঞান পার্টি ও জাল টাকা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্রাইম ডিভিশন ও গোয়েন্দা পুলিশ পৃথকভাবে গোয়েন্দা নজরদারি ও অপরাধীদের ধরতে একযোগে কাজ শুরু করেছে। পশুর হাটকেন্দ্রিক টহল পুলিশ বাড়ানোর পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও কাজ করছেন।
'ডিবি’র গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে জাল নোট কারবারির কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। আমরা তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছি।'
* ডিএমপি কমিশনারের যত নির্দেশনা
'পশুর হাটকেন্দ্রিক ২০টি নির্দেশনায় বলা হয়েছে—১. কোরবানির পশুর হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ২. পশুর হাটকেন্দ্রিক সাদা পোশাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ৩. প্রতিটি পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, ৪. প্রতিটি পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন, ৫. পশুর হাটকেন্দ্রিক মানি এস্কর্টের ব্যবস্থা, ৬. কন্ট্রোল রুম এবং প্রতিটি থানায় মানি এস্কর্ট টিম স্ট্যান্ডবাই রাখা। ৭. জালনোট শনাক্তকরণ টিম সরবরাহ করা। ৮. পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা এবং জালনোট শনাক্ত করা হয়—এমন লেখা সংবলিত বড় ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে টানানো। ৯. চৌহদ্দির বাইরে হাট বসতে না দেওয়া। ১০. বলপূর্বক পশুবাহী ট্রাক আটকিয়ে অন্য হাটে নামাতে না দেওয়া। ১১. নির্ধারিত হারে হাসিল আদায় নিশ্চিত করা। ১২. হাসিলের হার বড় ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে দৃশ্যমান রাখা। ১৩. জাল টাকার বিস্তার রোধ ও পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও অন্যান্য অপরাধীদের তৎপরতা বন্ধ করা। ১৪. ইজারার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে যাতে কোনও ধরনের সমস্যা না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। ১৫. পশুর বিক্রয়লব্ধ ঢাকা ছিনতাই প্রতিরোধ। ১৬. পশুর বিক্রেতাদের হাট পরিত্যাগ করাকালীন তাদের শারীরিক ও অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১৭. জনসচেতনতামূলক ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে টানানো/প্রচার-প্রচারণা/মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ। ১৮. স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে জনসচতেনতামূলক স্লোগান দৃশ্যমান স্থানে টানানো। ১৯. পশুর হাট ও পার্শ্ববর্তী বাস/অন্যান্য যানবাহন স্টেশনসহ নিজ নিজ থানা এলাকার সড়কে ২৪ ঘণ্টা বিশেষ করে রাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ২০. পশু ক্রয়-বিক্রয়কারীরা হাট থেকে বের হওয়ার সময় অপরিচিত ট্রাক বা যানবাহনে উঠে ছিনতাইকারীর কবলে না পড়েন, সে বিষয়ে পশুর ব্যাপারীদের সচেতন করার পাশাপাশি তাদের যাতায়াত পথ নিরাপদ রাখা।'
* হাটে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে নির্দেশনা
১. হাটে প্রবেশের মুখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেসিন, পানির ট্যাংক ও সাবান এবং পৃথকভাবে হ্যান্ড সেনিটাইজার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ২. কোনোক্রমেই ফেস মাস্ক ছাড়া কোনও লোককে হাটে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ৩. শিশু ও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের হাটে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
-এছাড়া চামড়া বিক্রয়, পাচার রোধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দুটি নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রথমত, অর্থ বহনকালে যানবাহন সাপেক্ষে স্কর্ট (মানি স্কর্ট) প্রদান করা। দ্বিতীয়ত, ঢাকার বাইর থেকে শুধুমাত্র কাঁচা চামড়াবাহী যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করবে। কোনও কাঁচা চামড়াবাহী যানবাহন ঢাকা থেকে বাইরে যেতে না দেওয়া। তবে সাভার পর্যন্ত (গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চেকপোস্ট স্থাপন) যেতে পারবে।
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি কমিশনারের ৩৩ নির্দেশনা
'বাস এবং রেলওয়ে স্টেশনকেন্দ্রিক তিনটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় বলা হয়েছে—টিকিট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি রোধসহ ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টিং এবং মলম পার্টির দৌরাত্ম্য বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, বিপণি বিতান/শপিং মল/স্বর্ণের মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমন্বয় করা। তৃতীয়ত, পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, বোনাসের বিষয়ে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করা।'
-ঈদ পরবর্তী ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তায় ৫টি নির্দেশনায় বলা হয়েছে—ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি আবাসিক/বাণিজ্যিক এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোকাম/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান/বাসাবাড়ি, ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতামূলক নির্দেশনা/পরামর্শ প্রদান করতে হবে। বাসা/অ্যাপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠান মালিকদের সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রাইভেট নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। ঈদের ছুটিকালীন আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে পুলিশিং (মোবাইল প্যাট্রোল, ফুট প্যাট্রোল, টহল, চেকপোস্ট বৃদ্ধি করা)। পাওয়ার স্টেশন, গ্যাস স্টেশনের নিরাপত্তা এবং নাশকতা প্রতিরোধ করা।